1. admin@dailyoporadhonusondhanltd.net : admin :
শিরোনামঃ
খুলনার বটিয়াঘাটা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তাকে নিয়ে প্রচারিত সংবাদের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত খুলনায় অতিবর্ষনে মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকা, মৎস্য কর্মকর্তা -জয়দেব পাল। শেরপুর ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্যের ৫৪ তম জন্মদিন পালিত শহীদ জিয়াউর রহমান ও সকল শহীদদের স্মরণে স্বাধীনতা কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে কোটালীপাড়ায় অবৈধ বাঁধ কেটে ১কিলোমিটার খাল দখল মুক্ত করলেন উপজেলা প্রশাসন বৈষম্যের শিকার এমপিও ভুক্ত কলেজের ল্যাব সহকারীরা শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের বিকল্প নেই র‌্যাব-৭ ও র‌্যাব-১১ এর যৌথ আভিযানে ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবর্ষণ করে ছাত্র হত্যা মামলার সশস্ত্র পলাতক আসামি জোবায়ের হোসেন প্রকাশ হৃদয় গ্রেপ্তার। র‍্যাব-৭, চট্টগ্রাম’র অভিযানে ইপিজেড থানার আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ৬ বছরের কণ্যা শিশু ধর্ষণ মামলার পলাতাক আসামি শফিকুল ইসলাম গ্রেপ্তার।  অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর নামে ভুয়া ভিসা দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মুকসুদপুরের সক্রিয় এক প্রতারক চক্র, প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা ভুক্তভোগীদের

মাকে হারিয়ে অনাহারে চার শিশু হতাশা আর হাহাকার শিশুদের চোখে-মুখে

  • আপডেট সময়ঃ সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৫৫০ জন দেখেছেন

মোঃরজিবুল ইসলাম,ব্যুরো প্রধান (খুলনা বিভাগ):-

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে পাগলবাজার।আর সেখানেই বাস করতেন এই ছোট্ট ছোট্ট চার শিশুর মা ঝর্ণা বিশ্বাস (৩০) এক বছর ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি। কিন্তু মৃত্যু তাকে কেড়ে নিলো তার ছোট্ট চার সন্তান থেকে। তার মৃত্যু হয় দেড় মাস আগে একদিন দুপুরে তার নিজস্ব বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ঝর্ণা। তারা হচ্ছে চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় সজল (১১) নানাভাবে ভুলিয়ে রাখতে চেষ্টা করে ১১ মাসের ছোট্ট বোন সুমিকে। এই একটা করুন দৃশ্য তবু তার কান্না থামে না। এটা দেখে সুমিকে কোলে নিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে সাত বছরের স্বর্ণালি।

এর মধ্যে ঘরে ঢুকে পাতিলের তলায় থাকা ভাত বেড়ে প্লেটে তোলে সাড়ে তিন বছরেরও নয়ন। মেঝে থেকে সেই ভাতের প্লেট নিয়ে খাটে ওঠে সে। সেখানে বসে বলতে থাকে, ‘তক্কারি দে, আমালে তক্কারি দে। অন্য পাশে বসে থাকা সজল তখন উঠে গিয়ে একটি পাতিল এনে দেয় নয়নের সামনে। কাঁচা পেঁপের ঝোলের নিরামিষ সেই তরকারি দিয়ে ভাত মাখিয়ে ছোট্ট সুমির মুখে তুলে দেয় নয়ন। তাদের বাবা সুদাস ব্রহ্ম (৩৬) তখন খাটের কোণে নির্বাক হয়ে বসা।

 

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে পাগলবাজার।সেখানে মূল রাস্তা থেকে ‍উত্তরে খালের পাশ দিয়ে দুটি ছোট সেতু পেরিয়ে রুইয়ারকুল গ্রামে সুদাস ব্রহ্মের বাড়ি।

শনিবার দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে এমন করুণ দৃশ্যে দেখা যায়। ছোট ছোট এই চার শিশুর মা ঝর্ণা বিশ্বাস (৩০) এক বছর ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন। প্রায় দেড় মাস আগে এমন এক দুপুরে বাড়িতেই তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর থেকে এই ছোট শিশুরা যেন একে অন্যকে দেখে রাখছে। নিজেরা রান্না করে, নিজেরাই বেড়ে খায়।ভাই-বোনদের মধ্যে দ্বিতীয় স্বর্ণালি বলে,এই ভাত-তরকারি সবই রান্না করেছে তাদের বড় ভাই সজল। মা অনেক দিন ধরে অসুস্থ ছিল। তখন থেকেই বড় ভাই বাড়ির রান্নাসহ সবকিছু করে।মা মারা যাওয়ার পর থেকে বাচ্চাগুলো খুব কষ্টে আছে জানিয়ে সুদাসের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী তুলি বিশ্বাস বলেন, ‘ঘর তো দেখিছেন। ঠিকমতো বেড়াও নাই। একটা ছোট চৌকি ছাড়া ঘরে আর কিছুই নাই।’স্থানীয় প্রবীণ মনিমোহন ব্রহ্মেরও মন পোড়ে পরিবারটির জন্য।

তিনি বলেন, ‘চারটে ছোট ছোট বাচ্চা। এগো রেহে তো সুদাসও কিছুই করতে পারছে না। বাড়ির চারপাশে পুকুর-ঘের। ছেলে-মেয়ে কোনডা পানিতে পড়ে না কী অয়। এরা বেচে থাকবে উপর আল্লাহ পাক ছাড়া কেউ জানে না । সরকার যদি এদের দিকে না চায় তাহলে এদের বাঁচার কোনো উপায় নেই। সুদাস ব্রহ্মের (৩৬) বসতবাড়ির তিন শতাংশ জমি ছাড়া কিছুই নেই। অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে চলে তাঁর সংসার। স্ত্রী মারা যাওয়ায় ছোট ছোট ছেলে-মেয়ের দেখাশোনা করতে হয় তার। ফলে সব দিন কাজেও যেতে পারেন না তিনি।শনিবারও কাজে যেতে পারেননি সুদাস ব্রহ্ম। তিনি বলেন, ‘ছোট মেয়েডা সকাল থেকে খুব কানতিছে। তাই বাড়ি রইছি। এই থাকার জমিডু ছাড়া কোনো জমি- জায়গা নাই।

পরের জমিতে মাছ ধরি, কাজ করি—এইভাবে কোনো রহমে চলতিলাম। হঠাৎ কইরে স্ত্রীর ক্যানসার হওয়ার পরেও ধার-দেনা করি চিকিৎসার চেষ্টা করিছি। বাঁচাতি তো আর পারি নেই। এখন এই ছেলে-মেয়েগুলোরে নিয়ে খুব অসহায়ের মইধ্যে আছি। বড় ছেলে সজল ব্রহ্ম স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। মা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে স্কুলে অনিয়মিত সে। তিন মাস হলো সজলের লেখাপড়া এক প্রকার বন্ধ।

এখন বাড়িতে রান্নাসহ অন্যান্য কাজ করতে হয় তাকে।খুব একটা কথা বলতে চায় না সজল। চোখেমুখে চিন্তার ভাঁজ নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। কয়েকটা প্রশ্ন করার পর সজল ব্রহ্ম বলে, ‘স্কুলে গেলি বাড়ি রানবে কেডা। ভাই–বুনগো দেখতি হয়। তাই স্কুলে যাই না। স্বর্ণালি ব্রহ্মও স্কুলে যেত। প্রথম শ্রেণিতে পড়ত। তবে মা মারা যাওয়ার পর থেকে তারও এখন আর স্কুলে যাওয়া হয় না। স্কুলের কথা শুনে বিষণ্ণ স্বর্ণালির চোখেমুখে হাসি ফুটে ওঠে। সে বলে, স্কুলেও যেতে ইচ্ছা করলেও পারে না। ভাই–বোনদের সঙ্গে থাকে।

থালা-বাসন ধোয়াসহ টুকটাক কাজ করে সংসারের।অভাব-দারিদ্র্য থাকলেও বাচ্চাদের কারও কাছে দিতে চান না সুদাস ব্রহ্ম। কথায় কথায় বলেন, ‘ওগোর মা তো নাই। এহন আমারই পালতি হবে। তবে ওগোর অন্য যায়গায় আমি দিমু না।’খবর পেয়ে শনিবার সুদাস ব্রহ্মের বাড়িতে যান চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইয়েদা ফয়জুন্নেছা। এ সময় তিনি শিশুখাদ্য, চালসহ কিছু আর্থিক সহায়তা দেন।

শেয়ার করুন

আরো দেখুন......